পোস্ট সূচি

এসইও ফ্রেন্ডলি বাংলা আর্টিকেল লেখার নিয়ম ও টিপস

হ্যালো রাইটারস! স্বাগত জানাচ্ছি বাংলা আর্টিকেল লেখার নিয়ম বিষয়ক নতুন একটি ব্লগে। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি একজন কন্টেন্ট রাইটার কিংবা কন্টেন্ট রাইটিং শিখতে আগ্রহী কেউ।

নিজের ব্লগ অথবা ক্লায়েন্টের জন্য সুন্দর ও SEO ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখতে হলে আর্টিকেল কিভাবে লেখা যায় তা জানতে হবে।

শুরুতেই বলে নিচ্ছি, আজকের এই ব্লগটি বেশ লম্বা ও তথ্যবহুল হবে। তাই আপনার হাতে যদি পর্যাপ্ত সময় না থাকে তাহলে এটি পরে সময় বের করে পড়ার পরামর্শ রইলো।

আর্টিকেল লেখার নিয়ম
আর্টিকেল লেখার নিয়ম

ব্লগিংয়ের জগতে একটা কথা খুব বেশি প্রচলিত আছে। তা হলো Quality content is the king. আর কোয়ালিটি কন্টেন্ট লেখা মোটেও সহজ কথা নয়।

এজন্য আপনাকে কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে ভালোমতো পড়াশোনা করতে হবে এবং কন্টেন্ট রাইটিং এর ধাপসমূহ সম্পর্কে জানতে হবে।

তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল বিষয়বস্তুতে যাওয়া যাক।

আর্টিকেল রাইটিং কি?

এই পোস্টটি অনেক নবীন রাইটার পড়বে। সে ধারণা থেকেই কন্টেন্ট রাইটিং কি তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটা পরিচয় দিয়েই শুরু করবো আজকের ব্লগটি।

কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে রিসার্চ ও পড়াশোনা করে পর্যাপ্ত তথ্যবহুল লেখা, ছবি, অডিও ও ভিডিও উপস্থাপন করাই হলো কন্টেন্ট রাইটিং। আর একে অনেকেই আর্টিকেল রাইটিং বলে থাকে।

কন্টেন্ট রাইটিং কত প্রকার ও কি কি?

শুরুতে অনেকের মাথায় এই প্রশ্নটি আসতে পারে। এমনকি আমিও এই ফিল্ডে যখন নতুন এসেছিলাম তখন আমারও এটা জানতে আগ্রহ হয়েছিল।

এই সেক্টরটি বেশ বড়। সুনির্দিষ্ট প্রকারভেদ সম্পর্কে আসলে বলা মুশকিল। তাই এখানে কোনো সংখ্যা উল্লেখ করতে পারছি না।

কন্টেন্ট রাইটিং অনেক প্রকার। যেমন:

  • ব্লগ রাইটিং
  • কপি রাইটিং
  • স্ক্রিপ্ট রাইটিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া রাইটিং
  • ইমেইল রাইটিং

এগুলোর প্রত্যেকটির আবার অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। সেগুলো আমাদের জানার প্রয়োজন নেই। এই ব্লগে আমরা শুধু আর্টিকেল লেখার নিয়ম শেখার দিকে ফোকাস করবো।

আর্টিকেল কিভাবে লেখা যায়?

আপনি যদি আর্টিকেল লিখতে চান তাহলে ভাষাগত দক্ষতা ও গ্রামারে বেশ ভালোরকম দখল থাকতে হবে। এছাড়া প্রচুর রিসার্চ করা ও পড়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

নিচের অংশে আমরা কয়েকটি স্টেপ দেখবে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি লেখালেখি শুরু করতে পারেন।

বাংলা আর্টিকেল লেখার নিয়ম

ইংরেজি, বাংলা অথবা যেকোনো ভাষায় আর্টিকেল লেখার নিয়ম প্রায় একই। এদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।

এখানে আমরা যে ধাপগুলি দেখবো সেগুলো যেকোন ভাষার কন্টেন্ট রাইটিং করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

আর্টিকেল লেখার ধাপসমূহ হলো-

  1. টপিক ও কিওয়ার্ড রিসার্চ
  2. হেডিং বা টাইটেল লেখা
  3. সাব-হেডিং নির্বাচন করা
  4. বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত লেখা
  5. মেটা ডেসক্রিপশন লেখা
  6. রিভিউ ও প্লেজারিজম চেক

এগুলো সম্পর্কে আমরা এবার বিস্তারিত জানবো।

১. টপিক ও কিওয়ার্ড রিসার্চ

কোনো আর্টিকেল লেখার শুরুতেই কোন বিষয়ে লিখবেন তা খুঁজে বের কর‍তে হবে। এজন্য টপিক ও কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে।

কোনো আর্টিকেল গুগলে বা যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্ক করানোর জন্য সঠিকভাবে Keyword Research করা জানতে হবে।

কিওয়ার্ড রিসার্চ করার জন্য অনেক টুল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু টুলস ফ্রিতে ব্যবহার করা যায় আর কিছু টুলস ব্যবহার করতে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন কিনতে হয়।

কিছু ফ্রি কিওয়ার্ড রিসার্চ টুলস হলো-

  • Ahrefs
  • Ubersuggest
  • Google Keyword Planner
  • KeywordTool.io

এগুলোর মধ্যে আমি বাংলা কিওয়ার্ড রিসার্চ করার জন্য Ubersuggest ও Ahrefs ব্যবহার করে থাকি। এই দুইটা সমন্বয় করে ব্যবহার করলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

এছাড়াও গুগলে আপনার টপিক লিখে সার্চ করার পরে দেখবেন কিছু প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সাজেস্ট করে। সেগুলোর প্রতিটির Search Volume ও Keyword Difficulty আলাদাভাবে চেক করে কম সার্চ ভলিউম কিন্তু ডিফিকাল্টি কম এরকম কিওয়ার্ড নিতে পারেন।

কিওয়ার্ড রিসার্চ করার নিয়ম

উপরের ছবিটি খেয়াল করুন, এখানে আমি গুগলে "অনলাইনে আয়" লিখে সার্চ করার পরে সার্চ রেজাল্টের মাঝে People also search for সেকশনে এই কিওয়ার্ডগুলো পেয়েছি।

এগুলো হলো আমার মূল কিওয়ার্ড "অনলাইনে আয়" এর সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু কিওয়ার্ড যেগুলো মানুষেরা সার্চ করে।

এখান থেকে প্রতিটি কিওয়ার্ড নিয়ে আলাদাভাবে সেগুলোর সার্চ ভলিউম ও ডিফিকাল্টি চেক করে কিওয়ার্ড সিলেক্ট করতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন LSI বা লম্বা কিওয়ার্ড নিতে।

২. হেডিং বা টাইটেল লেখা

আর্টিকেলের জন্য ভালো ও এসইও ফ্রেন্ডলি হেডিং লিখতে হবে। এখানে আপনার মূল কিওয়ার্ড যেন থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

আর টাইটেল বা হেডিং এর দৈর্ঘ ৬০ ক্যারেক্টারের বেশি হতে পারবে না। গুগল সাধারণত টাইটেল থেকে প্রথম 60 character ক্রল ও ইন্ডেক্স করে। তাই বেশি লম্বা টাইটেল লেখা যাবে না।

টাইটেল লেখার ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। এমন টাইটেল লিখবেন যাতে ভিজিটর সেটা দেখে পড়তে আগ্রহী হয়।

তবে কোনো অবস্থাতেই ক্লিকবেইট টাইটেল লেখা ঠিক হবে না। এতে পাঠক আপনার সাইটের প্রতি বিরূপ ধারণা করবে। যা কোনো সাইটের জন্য ভালো না।

৩. সাব-হেডিং নির্বাচন করা

আর্টিকেলের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু প্রাসঙ্গিক সাব-হেডিং খুঁজে বের করতে হবে। আর খেয়াল রাখবেন সাব-হেডিং গুলো যেন relavent keyword হয়।

আপনি কিওয়ার্ড রিসার্চ করার সময় মূল কিওয়ার্ড ছাড়াও অন্যা যে কিওয়ার্ডগুলো পাবেন সেগুলো এই সাব-হেডিং এ ব্যবহার করবেন।

আর একটা সাবহেডিং থাকবে যেটাতে আপনার মূল কিওয়ার্ড থাকবে। অর্থাৎ টাইটেল এর পাশাপাশি সাব-টাইটেল বা সাব-হেডিংয়ে মূল কিওয়ার্ড রাখবেন।

৪. বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত লেখা

সাব-হেডিং লেখার পরে প্রতিটি সাব-হেডিং সম্পর্কে আলাদা আলাদা রিসার্চ করে লিখতে হবে।

এজন্য সাব-হেডিংটা গুগলে সার্চ দিয়ে সেটা সম্পর্কে জানুন এবং তথ্য সংগ্রহ করুন। এভাবে প্রতিটা sub-heading আলাদাভাবে রিসার্চ করুন।

সাব-হেডিং এর অধীনে যে প্যারাগ্রাফগুলো হবে সেগুলো বেশি লম্বা করা যাবে না। প্যারাগ্রাফ যতটা ছোট রাখবেন পাঠক সেটা পড়তে তত কম বিরক্ত হবে।

আর প্রতিটি প্যারাগ্রাফের মাঝে অনেক বেশি ফাঁকা দেওয়া যাবে। অনেক ব্লগ দেখেছি যেখানে প্রতি প্যারার মাঝে ২-৩ লাইন ফাকা থাকে। সেগুলো দেখতেও বেমানান লাগে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে মূল কিওয়ার্ড (focus keyword) এর ঘনত্ব সঠিক রাখা প্রয়োজন। মূল কিওয়ার্ডের ঘনত্ব (keyword density) প্রতি হাজার শব্দে ৮-১০ বার থাকবে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটা এক হাজার শব্দের আর্টিকেল লেখেন তাহলে সেখানে মূল কিওয়ার্ড যেন ৮-১০ বার কিংবা এর আশেপাশে থাকে সেটা খেয়াল রাখবেন। আর দুই হাজার হলে ১৫-১৬ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করুন

এই ব্লগে খেয়াল করবেন যে আমি কয়েক জায়গায় বুলেট পয়েন্ট বা order-list ব্যবহার করেছি। আপনার আর্টিকেলেও প্রয়োজন পড়লে বুলেট পয়েন্ট বা অর্ডার-লিস্ট ব্যবহার করবেন।

৫. মেটা ডেসক্রিপশন লেখা

আর্টিকেল লেখার নিয়ম জেনে কোনো কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্ক করানোর জন্য সঠিকভাবে মেটা ডেস্ক্রিপশন লেখা খুব জরুরি।

কোনো কন্টেন্ট সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলিং ও ইন্ডেক্সিং রোবটকে সংক্ষেপে যে তথ্য দেওয়া হয় তা হচ্ছে মেটা ডেসক্রিপশন। এটা একটা HTML ট্যাগ।

আর্টিকেল লেখার নিয়ম - মেটা ডেসক্রিপশন
মেটা ডেসক্রিপশন

সার্চ রেজাল্টে আর্টিকেলের টাইটেল ও লিংক ছাড়াও আরেকটা যে অংশ থাকে সেটা মেটা ডেসক্রিপশন। উপরের ছবিতে মার্ক করা অংশটুকু দেখুন।

এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখার অন্যতম নিয়ম হলো সঠিকভাবে Meta Description লেখা। আর মেটা ডেসক্রিপশন লেখার সময় খেয়াল রাখবেন এর দৈর্ঘ যেন ১৬০ ক্যারেক্টারের বেশি না হয়।

মেটা ডেসক্রিপশনে এমন কিছু কথা লিখবেন যা আপনার পূরো আর্টিকেল সম্পর্কে জানাবে এবং তা পড়ে যেন ভিজিটর সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী হয়। আর সেখানে অন্তত একবার মূল কিওয়ার্ড বা ফোকাস কিওয়ার্ড লিখতে হবে।

অনেকে বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে মেটা ডেসক্রিপশন লেখে। ইংরে আর্টিকেলের ক্ষেত্রে তা কিছু কাজের হলেও বাংলা আর্টিকেলের জন্য কাজের নয়। তাই এটি নিজে লিখবেন।

৬. রিভিউ ও প্লেজারিজম চেক করা

আপনি যা লিখতে চেয়েছিলেন তা লেখা হয়ে গেলে সম্পূর্ণটা একবার পড়ে দেখুন। কোনো বানান, গ্রামার ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন।

এছাড়াও চেক করে দেখুন কিওয়ার্ড ডেনসিটি ঠিক আছে কিনা। অনেক বেশিবার ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করলে গুগল তা ভালোভাবে দেখে না। এটাকে বলে Keyword Stuffing, যা Black Hat SEO এর অন্তর্ভুক্ত।

ব্ল্যাক হ্যাট এসইও অনুসরণ করলে ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্ক পাওয়ার পরিবর্তে তা পেনাল্টি খেয়ে ডাউন হয়ে যেতে পারে। তাই কন্টেন্ট রাইটিং করার সময় ব্ল্যাক হ্যাট এসইও অনুসরণ করা যাবে না।

আর্টিকেলটি পাবলিশ করার আগে চেক করে নিন তা সম্পূর্ণ ইউনিক ও প্লেজারিজম-ফ্রি হয়েছে কিনা। ইংরেজি আর্টিকেল চেক করার জন্য অনেক টুল থাকলেও বাংলা আর্টিকেলের জন্য তেমন টুল নেই।

আমি Duplichecker টুলটি ব্যবহার করি, ভালো ফলাফল পাই। আপনারা বাংলা আর্টিকেল কপিরাইট-ফ্রি কিনা তা চেক করতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার আর্টিকেল অবশ্যই শতভাগ Plagiarism Free হতে হবে। ৯৫% এর আশেপাশে হলেও সমস্যা নেই। তবে চেষ্টা করবেন ১০০% কপিরাইট-ফ্রি রাখার।

আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ কোনটি?

আপনি যদি নতুন রাইটার হয়ে থাকে তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন। আমি উপরে উল্লেখ করেছি, আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো টপিক ও কিওয়ার্ড রিসার্চ করা।

ইতিকথা

এতক্ষণ ধরে সম্পূর্ণ ব্লগটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এখানে চেষ্টা করেছি অল্প কথা আর্টিকেল লেখার নিয়ম কি তা জানাতে। তবুও লেখাটা বেশ লম্বা হয়ে গেছে। এর জন্য দুঃখিত!

আশা করছি আর্টিকেল কিভাবে লেখা যায় সে সম্পর্কে জেনেছেন। বিষয়ক কোনো মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে তা কমেন্ট করে জানাতে যেন ভুলবেন না।

২টি মন্তব্য

  1. ধন্যবাদ, তবে পরিভাষা গুলোর বাংলা অথবা ব্যাখ্যা সাথে রাখা উচিৎ। যেহেতু এটা দেখে সবাই শিখবে।
    1. ধন্যবাদ আপনাকে। যেসব পরিভাষা বা টেকনিক্যাল টার্ম আছে সেগুলোর ব্যাখ্যা সংযুক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।