পোস্ট সূচি

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? আয় করবেন যেভাবে

বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের মাঝে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার মতো মজার বিষয়টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং পেশার সাথে জড়িত।

আমাদের দেশের একটা অংশ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বিষয়ে ওস্তাদ হলেও অনেকেই জানেন না অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি। তাদের আগ্রহী থাকলেও সঠিক গাইডলাইনের অভাবে আয়ের পথ খুঁজে পান না।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

আজকের এই ব্লগ আমরা জানবো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবো সে সংক্রান্ত সকল কিছু। আপনি যদি সম্পূর্ণ লেখাটি পড়েন তাহলে আশা করছি আবার শুরু থেকে শুরু করতে পারবেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যখন ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয় এবং সারা বিশ্বে তা পরিচিত পেতে থাকে ঠিক তখনই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ধারণাটা সবার সামনে আসে।

উন্মোচন হয় মার্কেটিং এর নতুন একটা শাখা। তখন থেকে এর শুরু এবং আজও এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশনের বিনিময়ে অন্যের পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের চেষ্টা করা এবং বিক্রয়মূল্য থেকে কমিশন গ্রহণ করা।

মনে করুন, আপনার বন্ধুর একটা মোবাইল শপ আছে। আর আপনার আছে একটা ওয়েবসাইট। আপনি মূলত মোবাইল বিষয়ক বিভিন্ন কন্টেন্ট প্রকাশ করেন।

একদিন আপনার বন্ধুকে প্রস্তাব দিলেন, আপনি যদি তার দোকানের জন্য ক্রেতা খোঁজ করে দিতে পারেন এবং পণ্য বিক্রি হয় তাহলে বিক্রয়মূল্য থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন।

আপনার বন্ধু রাজী হয়ে গেল। এবং আপনি যখন ওয়েবসাইটে কোনো কন্টেন্ট প্রকাশ করেন সেখানে কৌশলে আপনার বন্ধুর অনলাইন শপের প্রোডাক্ট লিংক দিয়ে পাঠকদের তা কিনতে আগ্রহ সৃষ্টি করলেন।

এটাকেই মূলত Affiliate Marketing বলে এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাধারণ এভাবেই কাজ করে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কি কি লাগে?

আপনি যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি তা বুঝে থাকেন তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এটা বেশ লাভজনক একটা ব্যবসার আইডিয়া।

সঙ্গত কারণেই অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কি কি লাগে। ব্লগের এই অংশে তাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে যা যা প্রয়োজন-

  • মোবাইল অথবা কম্পিউটার
  • একটা নিশ ওয়েবসাইট বা ব্লগ
  • সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ
  • অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট

উপরের দরকারি জিনিসগুলো থাকলে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন। এছাড়াও আরেকটি জিনিস আপনার খুব দরকার। তা হলো ধৈর্য।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ কত পার্সেন্ট কমিশন দেয়?

এটি একটা বিস্তৃত মার্কেটিং মাধ্যম। এখানে আয়ের সীমা নেই। কারো আয় ১০০ টাকা হতে পারে আবার কেউ প্রতিটি বিক্রয় থেকে ২০০০০ টাকাও আয় করতে পারে।

তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সাধারণত ৩-১৫ পার্সেন্ট কমিশন দেওয়া হবে। কিছু কিছু সার্ভিস বা প্রোফাক্টে এর চেয়েও অনেক বেশি কমিশন দেয়। এই মাত্রা ৫০%-৬০% পর্যন্ত হতে পারে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?

আপনি যদি জেনে-বুঝে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে চান তাহলে শুরুটা হওয়া উচিত খুব পরিকল্পিত।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব?

এখানে আমি কয়েকটা ধাপের কথা বলবো। এগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট ক্যারিয়ার আরম্ভ করতে পারেন।

যেভাবে শুরু করবেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-

  1. নিশ সিলেক্ট করা
  2. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করা
  3. লাভজনক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে পাওয়া
  4. ওয়েবসাইট তৈরি ও কন্টেন্ট পাবলিশ করা

উপরের ধাপগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও কার্যকরী আলোচনা করা হলো।

১. সঠিক নিশ সিলেক্ট করা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা আয় করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক নিশ সিলেকশন। এটার উপর নির্ভর করে আপনি কত দ্রুত সফলতা পাবেন, কত বেশি আয় করবেন ইত্যাদি।

অনেকে জানেন না নিশ কি? তাদের জন্য সংক্ষেপে বলে রাখি, নিশ হলো এমন কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয় বা ক্যাটাগরি যেটাকে ঘিরে কোনো ওয়েবসাইট গড়ে উঠে।

প্রতিটি নিশের আলাদা আলাদা চাহিদা রয়েছে। আর একটি নিশ থেকে অন্য একটি নিশে কমিশন হারও ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই সবচেয়ে লাভজনক নিশটি সিলেক্ট করতে হবে।

আবার অনেকে বেশ লাভজনক নিশ সিলেক্ট করেও নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করতে পারে না। বাছাই করা নিশ ভালো হলেও তা নিয়ে যদি আপনার কোনো আগ্রহ না থাকে এবং পূর্বের জ্ঞান না থাকে তাহলে আপনি ছিটকে পড়ে যাবেন।

তাই নিশ সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে এমন নিশ সিলেক্ট করবেন যেটা কমিশনের পরিমাণ বেশি দেওয়া হয়, প্রতিযোগিতা কম এবং আপনার আগ্রহ ও পূর্ব জ্ঞান রয়েছে।

স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস, হায়ার স্টাডিজ, প্রফেশনাল কোর্স, বিজনেস, ফিন্যান্স, আইন ইত্যাদি নিশ নিয়ে কাজ করলে বেশ ভালো পরিমাণ কমিশন পাওয়া যায়।

২. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করা

নিশ বাছাই করা হয়ে গেলে একটা স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করে নিতে হবে। আমি এখানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পরামর্শ দিচ্ছি না।

কারণ যারা নতুন শুরু করে তারা অনেকেই এটা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না। তাই আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেন তাহলে সেটা খুব একটা সঠিক হবে না এবং কাজে আসবে না।

তাই আমার পরামর্শ থাকবে, আপনি যেহেতু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ক্যারিয়ারের ঠিক শুরুতেই আছেন তাই একটা ছোটা পরিকল্পনা করুন।

৬-৭ মাসের পরিকল্পনা করুন যে আগামী মাসে আপনার ওয়েবসাইটে কী কী অগ্রগতি চান এবং কোথায় দেখতে চান।

৩. লাভজনক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে বের করা

ছোট্ট একটা পরিকল্পনা সাঁজানো হয়ে গেলে আপনার পরবর্তী কাজ হবে অনেক রিসার্চ করে আপনার জন্য কিছু লাভজনক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে বের করা।

এজন্য অবশ্যই আপনাকে বেশ কয়েকদিন ধরে ভালোমতো গবেষণা করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ইকমার্স সাইট, ফোরাম, সোশ্যাল মিডিয়া কমিউনিটির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

আপনার কষ্ট লাঘব করতে আমি কিছু লাভজনক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম খুঁজে বের করেছি। সেগুলোর তালিকা ও বিস্তারিত নিচের অংশে দিয়েছি।

৪. ওয়েবসাইট তৈরি ও কন্টেন্ট পাবলিশ করা

এর পরবর্তী কাজ হলে ভালোমানের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা। আপনি যদি নিজে নিজে ওয়েবসাইট দাঁড়া করাতে পারেন তাহলে করুন। অন্যথায় একজন ভালো মানের ডেভেলপারের সাহায্য নিতে পারেন।

আর যদি খরচ বাঁচানোর ও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের ইচ্ছা থাকে তাহলে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে নিজেই একটা ওয়েবসাইট বানানোর চেষ্টা করতে পারেন।

ওয়েবসাইট বানানো হয়ে গেলে তাতে নিয়মিত সিলেক্টেড নিশ রিলেটেড কন্টেন্ট পাবলিশ করতে হবে। এজন্য আপনাকে কন্টেন্ট রাইটিং কি এবং কিভাবে শুরু করতে হয় তা জানতে হবে।

অ্যাফিলিয়েট এর জন্য কন্টেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। আপনার কোনো বন্ধু হয়তো আপনার নিশ নিয়ে কাজ করে আপনার চেয়ে ভালো আয় করতে পারবে শুধু কোয়ালিটি কন্টেন্ট দিয়ে।

তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি তা জানলেই হবে না। সেই সাথে কন্টেন্ট রাইটিং এর A-Z শিখে ফেলতে হবে। আর সেই সাথে কিওয়ার্ড রিসার্চ শিখতে হবে।

কোনো একটা সাইটকে গুগলের প্রথম অএইজে কিংবা ভালো পজিশনে র‍্যাঙ্ক করানোর জন্য SEO (Search Engine Optimization) এর কোনো বিকল্প নেই।

নিজে যদি এসইও না বুঝেন তাহলে এক্সপার্ট কাউকে হায়ার করতে পারেন। অথবা একজন পার্টনার হিসেবে কোনো এসইও এক্সপার্টকে নিতে পারেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট

এতক্ষণে জেনেছি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করব সে সম্পর্কে। তবে এবার কিছু জনপ্রিয় ও লাভজনক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানবো।

কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট সাইট-

  • Amazon
  • Ebay
  • ClickBank
  • ShareASale
  • CJ Affiliate
  • Coursera

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

প্রসঙ্গ যখন Affiliate Marketing তখন Amazon সম্পর্কে কথা আসবে না, এটা অস্বাভাবিক। উপরে উল্লিখিত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে অ্যামাজন। বিশ্বের বড় বড় মার্কেটার সকলেই অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে জড়িত।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট হলো অ্যামাজন। তাই আপনি যদি অ্যামাজন এর অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রামে যুক্ত হন তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্রেতার কাছে পৌছাতে পারবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রোডাক্ট রয়েছে অ্যামাজনের সাইটে। তাই আপনি সহজেই আপনার নিশ রিলেটেড একাধিক পণ্যের অ্যাফিলিয়েশন পেয়ে যাবেন এখানে।

তবে একটা বিষয় নিয়ে অনেকেই মন খারাপ করেন। তা হলো অ্যামাজনের কমিশন রেট কম। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে অন্যান্য অনেকে প্রোগ্রামের চেয়ে অ্যামাজনে কমিশন কম দেওয়া হয়।

তবে অন্যান্য সাইটের চেয়ে অ্যামাজনে সহজেই ক্রেতাকে পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট করা যায়। ClickBank, CJ Affiliate এর মতো সাইট থেকে আপনি যদি প্রতি ১০০ ক্লিকে ৫-৭টা সেল পান তাহলে Amazon থেকে প্রতি ১০০ ক্লিকে অনায়াসেই ৮-১০টা সেল পেয়ে যাবেন।

আর এটাই মূলত অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধা। এখানে আপনি কমিশন কম পেলেও বিক্রয় বেশি পাবেন। ফলে গড়ে অন্যান্য সাইট থেকে আয় বেশি করতে পারবেন।

আরও জানুন: ৮টি লাভজনক নতুন ব্যবসার আইডিয়া

বাংলাদেশি অ্যাফিলিয়েট সাইট

উপরে আমরা যেসব সাইটের কথা জেনেছি সেগুলো ছিল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম। তবে কেউ যদি শুধু বাংলাদেশি অ্যাফিলিয়েট সাইট থেকে আয় করতে চাই তাহলে সে সেটাও পারবে।

নিচে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় বাংলাদেশি অ্যাফিলিয়েট সাইট এর নাম উল্লেখ করা হলো। এগুলো দিয়ে আপনিও শুরু করতে পারেন।

  • Daraz
  • 10 Minute School
  • BD Shop
  • Bohubrihi
  • Exonhost
  • ITNut Hosting

এই সাইটগুলোর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এখানে দারাজ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং সেলও অনেক বেশি জেনারেট করা যায়। ঠিক এর পরেই রয়েছে টেন মিনিট স্কুল।

শেষকথা

এখন অনলাইনে আয় করার উপায়গুলোর মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বেশ জনপ্রিয়। অনেকে মোবাইল দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করেন।

আপনি যদি অ্যাফিলিয়েট ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে এই ব্লগটি আপনাকে বেশ ভালো একটা গাইডলাইন দিবে। চেষ্টা করেছি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন